Thursday, March 31, 2011

 প্রধানমন্ত্রীতাজউদ্দীন আহমদকে ইন্দিরা গান্ধীর চিঠি (৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১)


প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদকে ইন্দিরা গান্ধীর চিঠি

সূত্র: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-03-31/news/141549




নয়াদিল্লি
ডিসেম্বর ৬, ১৯৭১

প্রিয় প্রধানমন্ত্রী,
৪ঠা ডিসেম্বর তারিখে মাননীয় ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং আপনি যে বার্তা পাঠিয়েছেন তা পেয়ে আমি ও ভারত সরকারের আমার সহকর্মীবৃন্দ গভীরভাবে অভিভূত হয়েছি। বার্তাটি পেয়ে ভারত সরকার আপনার নিবেদিতপ্রাণ নেতৃত্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানের জন্য আপনার অনুরোধ পুনর্বিবেচনা করেছে। আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে বিদ্যমান বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে ভারত সরকার স্বীকৃতি প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। আজ সকালে এ বিষয়ে পার্লামেন্টে আমি একটি বিবৃতি প্রদান করেছি।
অনুলিপি প্রেরণ করা হলো।
বাংলাদেশের জনগণকে প্রচুর দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। আপনাদের যুবসম্প্রদায় স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য এক আত্মোৎসর্গীকৃত সংগ্রামে লিপ্ত রয়েছে। ভারতের জনসাধারণও অভিন্ন মূল্যবোধের প্রতিরক্ষায় যুদ্ধ করছে। আমার কোনো সন্দেহ নেই যে মহান উদ্দেশ্য সাধনের জন্য এই সহমর্মিতা প্রচেষ্টা ও ত্যাগ দুই দেশের মৈত্রীকে আরও সুদৃঢ় করবে। পথ যতই দীর্ঘ হোক না কেন এবং ভবিষ্যতে দুই দেশের জনগণকে যত বড় ত্যাগ স্বীকারই করতে বলা হোক না কেন আমি নিশ্চিত যে জয় আমাদের হবেই।
এই সুযোগে আপনাকে, আপনার সহকর্মীগণকে এবং বাংলাদেশের বীর জনগণকে আমার প্রীতিসম্ভাষণ ও শুভকামনা জ্ঞাপন করছি।
আমি এই সুযোগে আপনার মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের প্রতি আমার সর্বোত্তম শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।
আপনার একান্ত
(ইন্দিরা গান্ধী)

জনাব তাজউদ্দীন আহমদ
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
মুজিবনগর

ভারতের পার্লামেন্টে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীতাজউদ্দীন আহমদকে ইন্দিরা গান্ধীর চিঠি
সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র

৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ ভারতের লোকসভায় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বিবৃতি

৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ ভারতের লোকসভায় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বিবৃতি

আক্রমণকারীকে প্রত্যাঘাত করতে হবে

সূত্র: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-03-31/news/141543

মাননীয় স্পিকার, আজ সকালে প্রাপ্ত সংবাদ অনুযায়ী, পশ্চিম পাকিস্তানের সরকার আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। গতকাল সন্ধ্যায় পশ্চিম পাকিস্তান বিমানবাহিনী আমাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে এবং আমাদের বেশ কয়েকটি বিমান ক্ষেত্রের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। সমান্তরালভাবে তাদের স্থলবাহিনীগুলো পশ্চিম সীমান্তজুড়ে আমাদের অবস্থানের ওপর গোলাবর্ষণ করেছে। তাদের প্রচারযন্ত্র সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে এই অভিযোগ প্রচার করছে যে ভারত তাদের ওপর আক্রমণ ও আগ্রাসন শুরু করেছে।
খবরটি আমার কাছে পৌঁছায়, ঠিক যখন আমি কলকাতা ত্যাগ করছিলাম। [দিল্লিতে] ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে আমি আমার সহকর্মী ও বিরোধীদলীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের পরামর্শ গ্রহণ করেছি। আমরা সবাই একমত এবং এই সংকল্পে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি যে জাতির স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে এবং সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে আগ্রাসী আঘাতকারী শক্তিকে প্রত্যাঘাত করতে হবে।
নয় মাসেরও বেশি সময় ধরে পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক সরকার বর্বরোচিতভাবে দলিত করে চলেছে বাংলাদেশের জনগণের মুক্তি ও মৌলিক মানবাধিকার। তাদের হানাদার বাহিনী যেসব অপরাধ করে চলেছে, প্রতিহিংসাপ্রসূত হিংস্রতার দিক থেকে সেগুলো তুলনাবিহীন। লাখ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে, আমাদের দেশে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এক কোটি মানুষকে। পুরো একটি জাতির এই নিশ্চিহ্নকরণ অভিযানের প্রতি এবং আমাদের নিরাপত্তার ওপর এই হুমকির প্রতি আমরা বারবার বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। সবখানেই মানুষ সহানুভূতি প্রকাশ করেছে, ভারতের ওপর অর্থনৈতিক ও অন্যান্য বোঝা এবং তার বিপদ উপলব্ধি করেছে।...
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ক্রোধান্ধ হয়ে উঠেছে, কারণ বাংলাদেশের জনগণ এমন কিছু মূল্যবোধের জন্য উঠে দাঁড়িয়ে আন্দোলন-সংগ্রামে নিবেদিত হয়েছে, যেসব মূল্যবোধ উপলব্ধি করতে সামরিক বাহিনী অক্ষম; এবং সেই সব মূল্যবোধ তারা দলিত করে চলেছে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রদেশেই।
মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধ-তৎপরতার সাফল্য যতই বেড়েছে, পাকিস্তানি বাহিনী ততই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আমাদের ঐতিহ্য নিপীড়ক স্বৈরাচারীদের পাশে দাঁড়ানো নয়, বরং নিপীড়িতদের পাশে দাঁড়ানো; এবং সে কারণেই তাদের রোষানল এখন বর্ষিত হচ্ছে আমাদের ওপর।...
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পরিচালিত আগ্রাসনকে পাকিস্তান বিস্তৃত করেছে ভারতের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধরূপে।..আমরা শান্তির পক্ষে, কিন্তু আজ শান্তিই বিপন্ন: শান্তি রক্ষা করতে হবে। আজ আমরা লড়াই করছি জাতীয় ভূখণ্ডের অখণ্ডতা ও জাতীয় মর্যাদা রক্ষার লক্ষ্যে। সর্বোপরি আমরা লড়ছি আমাদের লালিত আদর্শ ও শান্তি রক্ষার স্বার্থে।

বাংলাদেশ ডকুমেন্টস থেকে নেওয়া
ইংরেজি থেকে অনূদিত, ঈষৎ সংক্ষেপিত

 কমান্ডারদের নাম (মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১)

কমান্ডারদের নাম

সূত্র: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-03-31/news/141534

দেশরক্ষা মন্ত্রী : তাজউদ্দীন আহমদ
প্রধান সেনাপতি : কর্নেল এম এ জি ওসমানী
চিফ অব স্টাফ : লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ রব
ডেপুটি চিফ অব স্টাফ : গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার
‘জেড’ ফোর্স কমান্ডার : মেজর জিয়াউর রহমান
‘এস’ ফোর্স কমান্ডার : মেজর কে এম সফিউল্লাহ
‘কে’ ফোর্স কমান্ডার : মেজর খালেদ মোশাররফ
সেক্টর নং ১
মেজর জিয়াউর রহমান (এপ্রিল-১০ জুন ’৭১)
মেজর রফিকুল ইসলাম (১১ জুন-১৬ ডিসেম্বর ’৭১)
সেক্টর নং ২
মেজর খালেদ মোশাররফ (এপ্রিল-অক্টোবর ’৭১)
ক্যাপ্টেন এ টি এম হায়দার (অক্টোবর-১৬ ডিসেম্বর ’৭১)
সেক্টর নং ৩
মেজর কে এম সফিউল্লাহ (এপ্রিল-৩০ সেপ্টেম্বর ’৭১)
মেজর এ এন এম নূরুজ্জামান (১ অক্টোবর-১৬ ডিসেম্বর ’৭১)
সেক্টর নং ৪
মেজর চিত্তরঞ্জন দত্ত (মে-১৬ ডিসেম্বর ’৭১)
সেক্টর নং ৫
মেজর মীর শওকত আলী (আগস্ট-১৬ ডিসেম্বর ’৭১)
সেক্টর নং ৬
উইং কমান্ডার এম কে বাশার (জুন-১৬ ডিসেম্বর ’৭১)
সেক্টর নং ৭
মেজর খন্দকার নাজমুল হক (এপ্রিল-আগস্ট ’৭১)
মেজর কাজী নূরুজ্জামান (আগস্ট-১৬ ডিসেম্বর ’৭১)
সেক্টর নং ৮
মেজর আবু ওসমান চৌধুরী (এপ্রিল-১৫ আগস্ট ’৭১)
মেজর এম আবুল মঞ্জুর (১৮ আগস্ট-১৬ ডিসেম্বর ’৭১)
সেক্টর নং ৯
মেজর এম এ জলিল (এপ্রিল-১৬ ডিসেম্বর ’৭১)
সেক্টর নং ১০
কোনো সেক্টর কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়নি। প্রধান সেনাপতি তাঁর নিয়ন্ত্রণে এই বাহিনীকে রেখেছিলেন।
সেক্টর নং ১১
মেজর জিয়াউর রহমান (১০ জুন-১২ আগস্ট ’৭১)
মেজর আবু তাহের (১২ আগস্ট-১৪ নভেম্বর ’৭১)
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট এম হামিদুল্লাহ খান (১৫ নভেম্বর-১৬ ডিসেম্বর ’৭১)
সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, (২০০৪)।

বাংলাদেশ বাহিনীর জনবল (১৯৭১)

বাংলাদেশ বাহিনীর জনবল

সূত্র: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-03-31/news/141533

‘জেড’ ফোর্স
১ম, ৩য় ও ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এবং রওশন আরা ব্যাটারি।
‘এস’ ফোর্স
২য় ও ১১তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট।
‘কে’ ফোর্স
৪র্থ, ৯ম ও ১০ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এবং মুজিব ব্যাটারি।
১নং সেক্টর
ক. নিয়মিত বাহিনী: ২,১০০ খ. গণবাহিনী: ২০,০০০
২নং সেক্টর
ক. নিয়মিত বাহিনী: ৪,০০০ খ. গণবাহিনী: ৩০,০০০
৩নং সেক্টর
ক. নিয়মিত বাহিনী: ৬,৬৯৩ খ. গণবাহিনী:২৫,০০০
৪নং সেক্টর
ক. নিয়মিত বাহিনী: ৯৭৫ খ. গণবাহিনী: ৯,০০০
৫নং সেক্টর
ক. নিয়মিত বাহিনী: ১,৯৩৬ খ. গণবাহিনী: ৯,০০০
৬নং সেক্টর
ক. নিয়মিত বাহিনী: ২,৩১০ খ. গণবাহিনী: ১১,০০০
৭নং সেক্টর
ক. নিয়মিত বাহিনী: ২,৩১০ খ. গণবাহিনী: ১২,৫০০
৮নং সেক্টর
ক. নিয়মিত বাহিনী: ৩,৩১১ খ. গণবাহিনী: ৮,০০০
৯নং সেক্টর
ক. নিয়মিত বাহিনী: ৩,৩১১ খ. গণবাহিনী: ৮,০০০
১০নং সেক্টর
এই সেক্টরের কোনো ভৌগোলিক সীমানা ছিল না। বিভিন্ন নদীবন্দর ও শত্রুপক্ষের নৌ-যানগুলোতে অভিযান চালানোর জন্য নৌ-কমান্ডোদের নিয়ে সেক্টরটি গঠিত হয়েছিল। নৌ-কমান্ডোর সংখ্যা ৫১৫ জন।
১১নং সেক্টর
ক. নিয়মিত বাহিনী: ২,৩১০ খ. গণবাহিনী: ২৫, ০০০