Thursday, March 31, 2011

বহু প্রতীক্ষিত সেক্টর কমান্ডারদের সভা

বহু প্রতীক্ষিত সেক্টর কমান্ডারদের সভা

সূত্র: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-03-31/news/141529

জুন মাসের শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে যুদ্ধপরিস্থিতি নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এখানে সিদ্ধান্ত হয় যে প্রশাসনিক ও রণকৌশলের সুবিধার্থে রণাঙ্গনকে কয়েকটি অঞ্চল বা সেক্টরে ভাগ করা হবে। মন্ত্রিসভা প্রধান সেনাপতি কর্নেল ওসমানীকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেয়।
প্রধান সেনাপতি কর্নেল ওসমানী ১১ থেকে ১৫ জুলাই সেক্টর কমান্ডারদের সভা আহ্বান করেন। সভা অনুষ্ঠিত হয় কলকাতার ৮, থিয়েটার রোডে। সভায় সেক্টর কমান্ডার ছাড়াও সদরদপ্তরের স্টাফ অফিসাররা এবং সেক্টরের বেসামরিক বিষয়ক উপদেষ্টারাও যোগ দেন। শেষ মুহূর্তে সংবাদ পেয়ে তড়িঘড়ি করে হলেও প্রায় সব সেক্টর কমান্ডার ও বেসামরিক বিষয়ক উপদেষ্টা যথা সময়ে কলকাতায় এসে পৌঁছেন। তবে ৫ ও ১০ নম্বর সেক্টরে কমান্ডার এবং ১, ৫ ও ৭ নম্বর সেক্টরের বেসামরিক বিষয়ক উপদেষ্টারা প্রথম দিন অনুপস্থিত ছিলেন। সভা শুরুর আগে ২৮-৩০ জুনের মধ্যে বাংলাদেশ বাহিনীর সদরদপ্তর থেকে বেশ কয়েকটি নীতিনির্ধারণী চিঠি প্রচারিত হয়। এই চিঠিগুলোই সভার আলোচ্যসূচিতে প্রাধান্য পায়।
সভায় আগত সেক্টর কমান্ডারদের মধ্যে কয়েকজন স্বাধীনতাযুদ্ধকে গতি দান এবং যুদ্ধে একক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য একটি যুদ্ধ কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবে কর্নেল ওসমানীকে দেশরক্ষামন্ত্রী পদে উন্নীত করে যুদ্ধ কাউন্সিলের প্রধান নির্ধারণ করা হয়। এ ছাড়া কাউন্সিলে সাতজন সামরিক সদস্য প্রস্তাব করা হয়। সেক্টর কমান্ডারদের অধিকাংশ এই প্রস্তাবের পক্ষে মত পোষণ করেন। মেজর জিয়াউর রহমান এই প্রস্তাবের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিলেও মেজর খালেদ মোশাররফ এর বিরোধিতা করেন। কর্নেল ওসমানী যুদ্ধ কাউন্সিলকে তাঁর একক নেতৃত্বের জন্য হুমকি মনে করে সভার শুরুতেই প্রধান সেনাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন। ফলে শুরুর দিন প্রধান সেনাপতি সভায় অনুপস্থিত থাকেন। দেশরক্ষামন্ত্রী তথা প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ প্রথম দিনে সভাপতিত্ব করলেও শুরুতেই ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনার কারণে ওই দিন আলোচনা দীর্ঘায়িত হয়নি এবং প্রধানমন্ত্রীর বড় সময় ব্যয় হয় কর্নেল ওসমানীকে মানিয়ে পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করাতে। সভার শুরুতে বেশ কয়েকজন সেক্টর কমান্ডার উল্লেখ করেন যে ২৮ জুন থেকে প্রচারিত পত্রগুলো তাঁরা পাননি।
সূচনার বিব্রতকর পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠে ১২ তারিখ থেকে সভা যথাযথভাবে শুরু হয়। সেক্টর কমান্ডাররা সভায় তাঁদের নিজ নিজ এলাকার বিভিন্ন সাফল্য, সমস্যা ও পরিকল্পনার কথা আলোচনা করেন। একনাগাড়ে পাঁচ দিন সভা চলার পর ১৫ জুলাই সভার সমাপ্তি ঘটে। ১৫ জুলাই রাতে সেক্টর কমান্ডাররা অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে শপথ নেন। ১৭ জুলাইয়ের মন্ত্রিসভায় প্রধান সেনাপতি সেক্টর কমান্ডারদের সভার প্রতিবেদন পেশ করেন। ৬ আগস্ট সভার কার্যবিবরণী প্রচার করা হয়, তবে সভায় গৃহীত অনেক সিদ্ধান্তই বিশেষ করে সেক্টর সীমানা, গণবাহিনীর সংগঠন ও অস্ত্রশস্ত্র, গেরিলাযুদ্ধের রণকৌশল ইত্যাদি কার্যবিবরণী প্রকাশের আগেই জুলাই মাসের মধ্যে পৃথক পত্র দ্বারা প্রচারিত হয়।
যুদ্ধকালে এটিই সর্বোচ্চ পর্যায়ের একমাত্র সামরিক সভা, পরবর্তী সময়ে সেক্টর কমান্ডারদের সভা অনুষ্ঠিত হয় দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১১ জানুয়ারি ১৯৭২, ঢাকায়।

সূত্র: লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে, রফিকুল ইসলাম
বীর উত্তম, (২০০৬)।
মূলধারা’ ৭১, মঈদুল হাসান, (২০০৮)।

No comments: