প্রকাশঃ সচলায়তন
ভূমিকম্প হলে কী করণীয়/জীবন রক্ষার টিপস
- তানভীর ইসলাম
বাংলাদেশে বিশেষত ঢাকা শহরে বড় কোন ভূমিকম্প হলে পরিস্থিতি কী হবে, সেটা চিন্তা করতেও ভয় লাগে। আমি সাধারণত ‘আবহাওয়াজনিত’ দুর্যোগ নিয়ে কাজ করি। তাই, ভূমিকম্প আমার বিষয় নয়। কিন্তু যেহেতু সবরকম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মধ্যেই মিল রয়েছে, কাজেই এর কিছু খোঁজ আমাকেও মাঝে মাঝে রাখতে হয়। নীচে ভূমিকম্পের সময় জান বাঁচানোর জন্য কী করণীয় সে সম্পর্কে কিছু টিপস দিলাম। টিপসগুলো বিভিন্ন ভূমিকম্পের সময় উদ্ধার কর্মীদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার আলোকে লেখা।
১। ভূমিকম্পের সময় অনেকে টেবিল, চেয়ার, বিছানা ইত্যাদির নীচে আশ্রয় নেন- যা অবশ্যই পরিহার করা উচিত। কিন্ত কিছুদিন আগেও এটা ভূমিকম্পের সময় বহুল প্রচলিত একটি পদ্ধতি ছিল, যা ‘ডাক এন্ড কাভার’ (Duck and Cover) পদ্ধতি নামে পরিচিত। পৃথিবীর বড় বড় ভূমিকম্পে উদ্ধারকর্মী হিসেবে যারা কাজ করেছেন তারা বলছেন- ভূমিকম্পের সময় ‘ডাক এন্ড কাভার’ পদ্ধতি যারা অনুসরণ করেছে, তাদের বেশিরভাগকেই তারা নিহত অবস্থায় পেয়েছে। ডাগ কপ নামক একজন অভিজ্ঞ উদ্ধারকর্মী ১৯৮৫ সালে মেক্সিকো সিটির ভূমিকম্পে উদ্ধার কাজে অংশ নেন। প্রথম যে বিল্ডিংটিতে তিনি ঢোকেন, সেটি ছিল একটি স্কুল। ভূমিকম্পের সময় স্কুলের বাচ্চাদের বলা হয়েছিল ডেস্কের নীচে আশ্রয় নেবার জন্য। তারা প্রতিটি শিশুকেই ডেস্কের নীচে গুঁড়িয়ে যাওয়া অবস্থায় পান। এক্ষেত্রে ভূমিকম্পের সময় যেটা হয়- বিল্ডিং ভেঙ্গে পড়ার সময় সিলিং-এর সম্পূর্ণ ভার এসব অবজেক্টের ওপর পড়ে, তাতে এর নীচে আশ্রয়গ্রহণকারীর বেঁচে থাকার কোন উপায় থাকে না। তাই, ভূমিকম্পের সময় ডেস্ক, টেবিল ইত্যাদি কোন কিছুর নীচে ঢুকে আশ্রয় নেয়া ঠিক না।
২। উদ্ধার কর্মীরা আরো লক্ষ্য করেছেন- বিল্ডিং ভেঙ্গে পড়ার সময় সিলিং যখন কোন অবজেক্টের ওপর পড়ে একে গুঁড়িয়ে দেয়, ঠিক তার পাশেই ছোট্ট একটি খালি জায়গা বা void-এর সৃষ্টি হয়। একে তারা বলছেন ‘সেফটি জোন’ বা ‘ট্রায়াঙ্গল অফ লাইফ’। তাই ভূমিকম্পের সময় বড় কোন সোফা বা বড় কোন অবজেক্ট যেটা কম কম্প্রেস করবে- এরকম কিছুর পাশে আশ্রয় নিলে বাঁচার সম্ভাবনা বেশি থাকে। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য ছোট্ট একটু void-ই যথেষ্ট। বিপন্ন অবস্থায় কুকুর, বিড়াল এবং শিশুদের একটা সহজাত প্রবৃত্তি হল কুন্ডলি করে গুটিশুটি হয়ে যাওয়া। ভূমিকম্পের সময় মানুষেরও এটা অনুসরণ করা উচিত। তাহলে বিভিন্ন অবজেক্টের পাশে গুটিশুটি করে আশ্রয় নিলে এগুলো ভূমিকম্পের সময় যে ছোট void-এর সৃষ্টি করবে তাতে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।
৩। রাতের বেলা ঘুমানোর সময় ভুমিকম্প হলে কোন হুড়াহুড়ি করার দরকার নেই। গড়িয়ে মেঝেতে কুন্ডলি পাকিয়ে শুয়ে পড়ুন বিছানাকে ঢাল বানিয়ে। তার মানে আবার বিছানার নীচে যেন ঢুকবেন না, বিছানার পাশে আশ্রয় নিন। তেমনি ভূমিকম্পের সময় জানালা বা বারান্দা দিয়ে লাফ দেয়া এসবও করবেন না (আজকের পত্রিকায় দেখলাম অনেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হয়েছে)। সোজা কোন সোফা বা দুই নাম্বার পয়েন্টে যেভাবে বলেছি সেভাবে ঘরের মধ্যেই কোন অবজেক্টের পাশে আশ্রয় নিন।
৪। অনেককে বলতে শুনেছি ভূমিকম্পের সময় দরজার নীচে আশ্রয় নিলে নাকি বাঁচার সম্ভাবনা বেশি থাকে! দরজার নীচে বা পাশে থাকলে নির্ঘাত মারা পড়বেন। যদি দরজার নীচে থাকেন তবে সিলিং-এর নীচে চাপা পড়ে মারা পড়বেন আর যদি পাশে থাকেন দরজা আপনাকে দু’ভাগ করে কেটে ভেঙ্গে পড়বে।
৫। ভূমিকম্পের সময় কখনই সিঁড়িতে আশ্রয় নেবেন না। সিঁড়ির ‘মোমেন্ট অফ ফ্রিকোয়েন্সী’ বিল্ডিং-এর চাইতে ভিন্ন হয় এবং অনেক সময় বিল্ডিং ভেঙ্গে না পড়লেও সিঁড়ি দ্রুত ভেঙ্গে পড়ে।
৬। চেষ্টা করুন বাসার একেবারে ভিতরের দিকের রুমে না থেকে বাইরের ওয়ালের কাছাকাছি আশ্রয় নিতে। বিল্ডিং-এর ভেতরের দিকে থাকলে সবকিছু ভেঙ্গে পড়ার পর আপনার ‘escape route’ বা ‘উদ্ধার পাবার রাস্তা’ ব্লক হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বাইরের ওয়ালের কাছাকাছি থাকলে ব্লক কম থাকবে, তাড়াতাড়ি উদ্ধার পাবার সম্ভাবনাও বেশি থাকবে।
৭। ভূমিকম্পের সময় যদি গাড়ীতে থাকেন, তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির পাশে বসে বা শুয়ে পড়ুন। গাড়ীর ভেতরে থাকলে রাস্তার ওপরের বিভিন্ন অবজেক্ট (আর যদি উপরে ব্রিজ বা ফ্লাইওভার থাকে তো কথাই নেই) গাড়ীর ওপর পড়ে গাড়ীকে চূর্ণ করার ফলে মারা যাবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
৮। যারা পত্রিকা অফিসে কাজ করেন তাদের জন্য সুসংবাদ। উদ্ধারকর্মী যাদের পত্রিকা অফিসে উদ্ধার কাজের অভিজ্ঞতা আছে, তারা বলেছেন- পত্রিকা অফিস বা যেসব অফিসে বড় বড় কাগজের স্তুপ আছে, সেগুলো কখনো কম্প্যাক্ট করে না। কাজেই এসব কাগজের স্তুপের পাশে তারা বড় বড় void খুঁজে পেয়েছেন। যারা এসব অফিসে কাজ করেন, তারা নিশ্চিন্তে কাগজের টালের পাশে আশ্রয় নিন।
৯। সব বড় ভূমিকম্পের পরপরই আরেকটা ছোট ভূমিকম্প হয় যেটাকে ‘আফটার শক’ বলে। এটার জন্যও সতর্ক থাকুন, না হলে পচা শামুকেই শেষমেষ পা কাটতে হতে পারে।
১০। প্রথম ভূমিকম্পের পর ইউটিলিটি লাইনগুলো (গ্যাস, বিদ্যুত ইত্যাদি) একনজর দেখে নিন। কোথাও কোন লিক বা ড্যামেজ দেখলে মেইন সুইচ বন্ধ করে দিন।
2 comments:
অসাধারণ ভাই, কিন্তু একটা জিনিস বুঝলাম না,সোফার পাশে কিভাবে আশ্রয় নিব?ছাদ যদি মাথায় ভেগে পড়ে? একটা ছবি দিয়ে পজিশনটা বোঝালে ভাল হত।
ঘরের কর্নার কি সবচেয়ে ভাল না? কারণ ছাঁদ ভেগে সাধারণত খাড়া নিচে পরে না।তাই ঘরের কোনায় একটা ট্রায়াঙ্গেল তৈরি হবে যেটাতে থাকলে আঘাত কম লাগতে পারে।
আসলে খেয়াল করলে দেখবেন এটি আমার নিজের লেখা নয়। এটি তানভীর ভাইয়ের সচলায়তনের লেখা ব্লগ থেকে তুলে রাখার। অবশ্য পরবর্তীতে তানভীর ভাই কিছু জিনিস সংশোধন করে নতুন ব্লগ লিখেছিলেন যা এই লিংকে পাবেন।
Post a Comment